বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

১১২৪২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ

১১২৪২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ

স্বদেশ ডেস্ক:

আগ্রাসী ঋণে বেকায়দায় পড়া ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের ছোবল আরও তীব্র হচ্ছে। ডিসেম্বরের পর খেলাপি ঋণ আর বাড়বে নাÑ অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরও গত ছয় মাসে খেলাপি ঋণ সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে এক লাখ ১২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হওয়া ব্যাংকগুলোই খেলাপি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বিশেষ করে জনতা, এবি ও পদ্মা ব্যাংকে ব্যাপকহারে খেলাাপি ঋণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্র জানায়, চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকায়ই খেলাপি হয়ে গেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা আগের বছরের জুনে ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। আর গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ছয় মাসে বেড়েছে ১৮ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। অথচ অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না বলে ঘোষণা দেন। এ জন্য খেলাপিদের ছাড় দিতে নানা সুবিধা দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য গতকাল রবিবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে খেলাপি ঋণ এখনই কমার সুযোগ নেই। কারণ নন-পারফর্মিং লোন কমানোর জন্য যে এক্সিট প্ল্যান দিয়েছিলাম, সেটি এখনো কার্যকর করতে পারিনি। এক্সিট প্ল্যান কার্যকর হলে বলবেন যে, বাড়ছে কী বাড়েনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফশিলি ব্যাংকগুলো নানাবিধ পদক্ষেপের কথা বললেও কার্যত কমছে না খেলাপি ঋণ। পাহাড় সমান খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ স্বাধীনতার পর এ যাবতকালে সর্বোচ্চ।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকে দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সুদহার কমানোর জন্য বরাবরই আমানতের সুদহার কমানো হচ্ছে। খেলাপি ঋণের উচ্চহারের সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদ উচ্চ সুদহারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আটকে যা তহবিলের ব্যয় মেটাতে আমানতকারী সুদ কম দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে বেশি সুদ আদায় করা হচ্ছে।

ব্যাপকহারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছেÑ কয়েকটি ব্যাংক বড় বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা। এককভাবে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে জনতা ব্যাংকের। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের জুনে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির পর থেকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে ব্যাংকটির।

আর খেলাপি ঋণ প্রায় চার গুণ বেড়েছে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের। নজিরবিহীন ঋণ কেলেঙ্কারির অকুস্থল এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। আগের বছরের জুনে ছিল এক হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।

এদিকে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা থেকে কমে ১২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৪ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুনে ছিল ৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা।

অন্যদিকে অনিয়মে ধুঁকতে থাকা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুনে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান বলেন, আগে যেসব গ্রাহকের পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন সুবিধা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করা হয়, তা আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করেও তা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংকগুলো খেলাপি দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলো আরও সতর্ক হতে হবে এবং মনিটরিং বাড়াতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877